রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post
মাগুরা সদর হাসপাতাল

চিকিৎসক সংকটে কাঙ্খিত সেবাবঞ্চিত রোগীরা 

মাগুরা প্রতিনিধি 

চিকিৎসক সংকটে কাঙ্খিত সেবাবঞ্চিত রোগীরা 

মাগুরা সদর হাসপাতালে মেডিসিন, শিশু ও গাইনি বিভাগের কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে সার্জারি, আইইএনটি ও অবস্টেট্রিক্যাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়নি। হাসপাতালে গাইনি রোগী ভর্তি করা হলেও সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় না বললেই চলে।

মাগুরা সদর হাসপাতালে মোট পদের সংখ্যা ৩৪১ জন। কর্মরত রয়েছেন ২৪২ জন, পদশূন্য রয়েছে ৯৯টি। এর মধ্যে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫৮টি, পদশূন্য রয়েছে ৩৯জন, কর্মরত চিকিৎসক আছেন ১৯ জন তার মধ্যে প্রেষণে আছেন ৪জন। গত ১ সপ্তাহে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বছরে অন্য সময়ের তুলনায় হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগী বেড়েছে।চিকিৎসকদের চেম্বার ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে জ্বর নিয়ে আসা রোগীর ভিড় বেড়েই চলেছে। রোগীদের বেশিরভাগই -শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, চোখ ওঠা, খুশকি, খোসপাঁচড়া বা চর্মরোগ, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসছে। তবে চিকিৎসকরা অধিকাংশ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন।

সদর হাসপাতালে আসা রোগী আমেনা বলেন, টাকা দিয়ে টিকিট কেটে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ডাক্তার নেই, অফিসের স্টাফরা ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর দুই তিনটা ওষুধ লিখে তাড়িয়ে দেন ডা.।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) সদর হাসপাতাল আউটডোর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর মাসে মাগুরা সদর হাসপাতালের আউটডোরে সেবা নিতে আসা রোগীর পরিমাণ ২২,৫৬০.জন। এবং ভর্তি রোগের পরিমাণ ৫ হাজার ২৩১জন। এছাড়া ইমার্জেন্সিতে সেবা নিয়েছেন ১২২২০ জন। চিকিৎসক সংকট থাকায়, চারজন (ইএমও) ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। রথীন হালদার মাগুরা থেকে বদলি নিয়েছেন। দুজন ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার চালাচ্ছেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল। তারা হলেন,ডাক্তার মামুন আর রশিদ ও ডাক্তার কৃষ্ণ দাস বিশ্বাস। 

দুজন মেডিকেল মেডিকেল অফিসার দিন এবং রাতে পর্যাপ্ত এ রোগীর সেবা দেয়া সম্ভব না। তেমনি আউটডোর মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন, দুজন তারা হলেন, অরুণ কান্তি বিশ্বাস ও ডা. কামরুন নেছা মনি। আউটডোরের বিপুল এই রোগীর বিপরীতে মাত্র দুজন ডাক্তার থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ডাক্তার অমর প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, এ সপ্তাহের ৪ তারিখে ১৫৫ জন, ৫ তারিখে ১২৮জন, ৬ তারিখে ১২৯ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। 

সিভিল সার্জন ডা. শামীম কবির বলেন, চলতি শীত মৌসুমে ধুলাবালিতে বিভিন্ন রোগের জীবাণু থাকে। কমবয়সী ও বেশি বয়সী মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ধুলাবালি মানব শরীরের ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এছাড়া সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিল প্রদাহ, গলাব্যথা, অ্যাজমাসহ হতে পার বিভিন্ন রোগ হয়। 

শীত উপযোগী হালকা ও নরম গরম কাপড় ব্যবহার করুন। সহনীয় গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান। বেশি মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ লোক, বিশেষ করে হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত লোকের সামনে শিশুদের যেতে দেবেন না।

ডা. মো. মহসিন উদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল মাগুরা বলেন, এ জেলায় জনসংখ্যা: ১০ লাখ ৩৩ হাজার ১১৫ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কি.মিটারে ৯৯৪ জন। জেলার এক তৃতীয়াংশ জনগণ মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে মাগুরা চিকিৎসক সংকট রয়েছে।  

চিকিৎসকেরা বলছেন, বার বার আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার কারণে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ সময় শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ধুলাবালি থেকে রক্ষায় মাস্ক পড়তে হবে। বিশেষ করে সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। বাতাসে,ধুলোবালি বেশি থাকায় বাড়তে শুরু করে অ্যালার্জি, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা। 

বেশি ঠান্ডার সমস্যায় অনেকে ভোগেন জ্বর ও নিউমোনিয়ার সমস্যায়। টনসিলের সমস্যাতেও ভুগতে দেখা যায় অনেক রোগীকে। বেশি ঠান্ডা আবহাওয়াতে অনেকের মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ নভেম্বর শুরু থেকেই জেলাজুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কখনো মেঘলা আকাশের সঙ্গে বৃষ্টি ও বাতাস,কখনো গরম। 

সন্ধ্যার পর গরম অনুভূত হলেও শেষ রাতে বাড়ছে ঠান্ডার প্রকোপ। তাপমাত্রার এমন ওঠানামায় এ জেলায় বেড়েছে জ্বর-সর্দি ও কাশির প্রকোপ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। 

টিএইচ